Friday, February 19, 2016

বায়তুল মোকাররমে এসব কী হচ্ছে !!!



২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ছিল শুক্রবার। অন্যান্য জুমাবারের মতো আমি আমার সপ্তম শ্রেণীতে পড়–য়া ছেলে রিশাদকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে পড়ি বেলা ১১টায়। শুক্রবার দিনটিকে আমি সব সময়ই ফ্যামিলি ডে হিসেবে বিবেচনা করি। সব অফিসিয়াল কাজকর্ম, সামাজিক যোগাযোগ, লেনদেন ইত্যাদি বাদ দিয়ে কেবল পরিবার নিয়ে ব্যস্ত থাকি। ছেলেমেয়েদের সাথে মতবিনিময়ের পাশাপাশি আমার চিন্তাচেতনা-আদর্শ দিয়ে তাদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করি। ধর্ম-কর্ম, শিল্প-সাহিত্য, নাটক-সিনেমা থেকে শুরু করে হাল আমলের খেলনা, ফাস্টফুড এবং আগামী দিনের জীবন-জীবিকা সম্পর্কে আমরা খোলামেলা আলোচনা করি। আমার জীবনের সফলতা, সার্থকতা এবং চরিত্রের ভালো দিকগুলো দিয়ে সন্তানেরা যাতে উপকৃত হতে পারে এজন্য সপ্তাহের পবিত্র দিনটিতে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার অভাব থাকে না।
বাসা থেকে বের হয়ে ছেলেকে নিয়ে প্রথমে আমি আমার অফিসে আসি। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক সময় নিয়ে বাপ-বেটা মিলে পত্র-পত্রিকা পড়ি, ইন্টারনেট সার্চ করি এবং জীবনঘনিষ্ঠ কিছু বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করি। তার পর সাড়ে ১২টার দিকে মসজিদের উদ্দেশে বের হয়ে পড়ি। গত এক বছর আমরা একেক সপ্তাহে একেক মসজিদে নামাজের অভ্যাস গড়ে তুলেছিলাম। এর আগে নিয়মিত নামাজ পড়তাম বায়তুল মোকাররমে। মাওলানা উবায়দুল হক যখন খতিব ছিলেন তখন থেকেই আমি একজন নিয়মিত মুসল্লি হিসেবে সেখানে নামাজ পড়ে আসছি। মাঝে মধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন অফিসে যেতাম এবং তাদের লাইব্রেরিতে বসে দীর্ঘ সময় পড়াশোনা করতাম। ২০১৫ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের হরতাল-অবরোধ এবং জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের সময় বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজ পড়া, বিশেষত বালকপুত্রকে নিয়ে সেখানে যাওয়া ছিল রীতিমতো ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে আমরা কয়েকটি মাস ভিন্ন ভিন্ন মসজিদে জুমা আদায় করতে গিয়ে বায়তুল মোকাররমে নিয়মিত যাওয়ার অভ্যাসটি হারিয়ে ফেলি।
ঘটনার দিন রিশাদ প্রস্তাব করল বায়তুল মোকাররমে গিয়ে নামাজ আদায় করার জন্য। আমিও বেশ আগ্রহ বোধ করলাম এবং সেখানে উপস্থিত হলাম। জাতীয় মসজিদের সম্মানিত খতিব অধ্যাপক সালাউদ্দিন দেশের অন্যতম প্রবীণ আলেম। যতটুকু বলেন তা জেনে-শুনেই বলেন এবং তার বক্তব্যে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা যেমন থাকে তেমনি আল্লাহ এবং রাসূল সা:-এর মহব্বত উপচে পড়ে। ফলে কোনো বিতর্ক ছাড়াই তিনি গত প্রায় ৮ বছর দেশের সর্বোচ্চ ইমাম হিসেবে দ্বীনের খেদমত করে আসছেন লাখ লাখ মুমিন ও মুত্তাকির সমর্থন, বিশ্বাস এবং ভালোবাসা নিয়ে। কুরআন-হাদিসের অনেক বিষয় নিয়ে তার সাথে আমার ব্যক্তিগত আলাপ-আলোচনা হয়েছে বহুবার। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান কিংবা মাহফিলে আমরা একই মঞ্চে বসে যেমন আলোচনা করেছি, তেমনিভাবে তার উপস্থিতিতে বায়তুল মোকাররমের মিম্বরে দাঁড়িয়ে বয়ান করার সৌভাগ্যও লাভ করেছি। গত এক বছরে আমার যেমন বায়তুল মোকাররমে যাওয়ার সুযোগ হয়নি, তেমনি খতিব হুজুরের সাথেও দেখা সাক্ষাৎ কিংবা টেলিফোনে কথাবার্তা হয়নি। মসজিদে যাওয়ার পথে ভাবলাম- নামাজ শেষে হুজুরের সাথে দেখা করব এবং পরিবারের জন্য দোয়া চেয়ে আসব।
বায়তুল মোকাররমে ঢুকে প্রথমেই হোঁচট খেলাম। দেখলাম খতিব হুজুরের পরিবর্তে অন্য একজন বক্তৃতা দিচ্ছেন। জুমার নামাজের খুতবার আগে যে বয়ান হয়, তা একেক মসজিদে একেক রকম হয়। বায়তুল মোকাররমে মাঝে মধ্যে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা হয় আবার মাঝে মধ্যে ধর্ম-কর্ম, জগৎ সংসার কিংবা আল্লাহ-রাসূল সা: এবং সাহাবিদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গড়পড়তা আলোচনা হয়। বিষয়ভিত্তিক আলোচনার ক্ষেত্রে অনেক সময় ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে অফিসিয়াল পেপার সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ঘটনার দিন যিনি খতিবের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি ইসলামে শিশুর অধিকার ও শিশু প্রতিপালনে সমাজের দায়িত্ব নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। আমার সাথে যেহেতু আমার কিশোরপুত্র ছিল তাই বিষয়বস্তুর কথা শুনে আমি আশ্বস্ত হওয়ার চেষ্টা করলাম। দু-তিন মিনিট আলোচনা শোনার পর আমার মনটা বিষিয়ে উঠল। আলোচনার কোনো আগামাথা ছিল না। যেসব উদাহরণ টানা হচ্ছিল তার সাথে ইসলাম, কুরআন এবং হাদিসের যোগসূত্র স্থাপন করানো যাচ্ছিল না। অধিকন্তু বক্তার বক্তব্যের ঢং, উচ্চারণ, সুর, তাল-লয় ইত্যাদি একত্র হয়ে একটি বিরক্তিকর, অপাঙ্ক্তেয় এবং অপরিপক্ব বয়ান পরিবেশিত হচ্ছিল। আমার মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশের ইউনিয়ন পর্যায়ের অনেক ছোটখাটো মসজিদের ইমামও জুমাবারে এর চেয়ে ভালো বয়ান করে থাকেন।
আলোচনার একপর্যায়ে ওই দিনের ইমাম হঠাৎ করেই শুরু করেন অদ্ভুত এক কিসসা বলা। তিনি এমন একটি মনগড়া মিথ্যা কাহিনী বর্ণনা শুরু করলেন, যা বক্তার জন্য রীতিমতো কবিরা গুনাহের দায় বয়ে আনতে আরম্ভ করল। অন্য দিকে, যারা স্বল্পজ্ঞানের অধিকারী শ্রোতা ছিলেন তারা গাফেল হয়ে গেলেন এবং জুমার নামাজের আসমানি ফায়দা থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনার মধ্যে পড়লেন। যারা ইতিহাস জানতেন এবং কথিত ইমামের ভুলভ্রান্তিগুলো বুঝতে পারলেন তাদের নামাজই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেল। দেশ-বিদেশের মুফতিরাই এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন ওই অবস্থায় মুসল্লিদের দায়িত্ব ও কর্তব্য কী ছিল? তবে আমি নিশ্চিত যে, পৃথিবীর কোনো মুসলিম দেশের জাতীয় মসজিদে এ ধরনের লোককে ইমামতি তো দূরের কথা, আজান দেয়ারও সুযোগ দেয়া হতো না। অন্য দিকে, মিম্বরে দাঁড়িয়ে কোনো ইমাম যদি ভুলেভরা মিথ্যা কিসসা-কাহিনী বর্ণনা করতেন, তবে মুসল্লিরা আল্লাহর ওয়াস্তে দাঁড়িয়ে যেতেন এবং সমস্বরে প্রতিবাদ জানাতেন।
আমার ইচ্ছে হচ্ছিল দাঁড়িয়ে যাই এবং চিৎকার করে বলি- বন্ধ করুন এসব বোগাস কথাবার্তা। ভালো করে শিখে আসুন তারপর মিম্বরে উঠুন। মজলিসের সম্মান, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এবং আমার কিশোর পুত্রের মসজিদপ্রীতির কথা ভেবে আমি নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা করলাম। একবার মনে হলো- উঠে চলে যাই। অন্য মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ি। কিন্তু ঘড়িতে সময় দেখে মনে হলো অন্যত্র গিয়ে জামাত পাওয়া যাবে না। অন্য দিকে, আমার জ্ঞান-বুদ্ধি জানান দিলো, এই ইমামের পেছনে আমার নামাজ হবে না। আমি অস্থির হয়ে পড়লাম এবং পাশে বসা কয়েকজন বয়স্ক আলেমকে ইমাম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তারাও রাগে গজ গজ করছিলেন এবং এ ধরনের অযোগ্য লোককে কেবল রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেয়ার জন্য সরকারের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করছিলেন। মুসল্লিরা আমাকে ওই দিনের ইমাম সম্পর্কে যা বললেন, তার সবকিছু হয়তো ছাপানো যাবে না। তবে উল্লেখযোগ্য অংশটুকু যদি না বলি তবে সরকারের কর্তাব্যক্তিরা সতর্ক হওয়া থেকে মাহরুম হয়ে পড়বেন। এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলার আগে ইমাম সাহেবের আজগুবি গল্পের ভুলভ্রান্তি এবং পরিণতি সম্পর্কে কিছু সম্যক ধারণা দেয়া যাক।
ইমাম সাহেবের কেচ্ছাটি ছিল এরূপ- ‘খলিফাতুল মুসলেমিন বাদশাহ হারুন অর রশিদের এক শাহজাদার সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। শাহজাদা রাজকর্ম বাদ দিয়ে রাস্তায় ভিক্ষে করতেন। এ কারণে বাদশাহ তাকে দু’চোখে দেখতে পারতেন না। একদিন শাহজাদা এবং বাদশাহ মুখোমুখি হলেন। বাদশাহ বললেন, তুমি রাজকার্য ছেড়ে পথে-প্রান্তরে ঘুরে বেড়াও কেনো! শাহজাদা বললেন, এতেই আমার লাভ বেশি। বাদশাহ জানতে চাইলেন, কিরূপে তোমার লাভ হয় তা বুঝিয়ে বলো তো! শাহজাদা তখন তার পিতাকে বললেন, ওই যে দেখেন! গাছের ওপর একটি পাখি বসে আছে, আপনি তো বাদশাহ! তাহলে পাখিকে ডাক দিয়ে হুকুম করুন যাতে সে উড়ে এসে আপনার হাতের ওপর এসে বসে। বাদশাহ বেশ বিরক্ত ও তাজ্জব হয়ে বললেন, মানুষের কথায় পাখি কেনো তার হাতের ওপর এসে বসবে! শাহজাদা তখন বললেন, এই দেখুন কিভাবে বসে! এরপর তিনি পাখিটিকে ডাক দিলেন- আয়! আয়! পাখি। আমার হাতে আয়! শাহজাদার ডাক শুনে পাখিটি উড়ে এসে তার হাতে বসল।’
ইমাম সাহেব উপরি উক্ত কিসসাটি বলার পর জোরে হুঙ্কার দিয়ে বললেন, বলেন সোবাহান আল্লাহ! কিন্তু নিরীহ মুসল্লি সমন্বরে বলে উঠলেন, সোবাহান আল্লাহ। ইমাম সাহেব আবার বললেন, বাদশাহ হারুন ছিলেন মস্তবড় ওলি আল্লাহ! প্রতি বছর হজে যেতেন। কোনো বছর যেতে না পারলে অনেক লোককে হজে পাঠাতেন... ইত্যাদি। এখন প্রশ্ন হলো- এই কিসসা-কাহিনীর সাথে আমার কিংবা অন্যান্য সচেতন মুসল্লির নামাজ না হওয়ার কী সম্পর্ক থাকতে পারে অথবা এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে ইমাম সাহেব ইসলামের কতটুকু ক্ষতি করলেন, যার কারণে তার বিরুদ্ধে সম্পাদকীয় কলাম লেখার প্রয়োজন দেখা দিলো? এ ব্যাপারে আমার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য নিম্নরূপ-
প্রথমত, কিসসাটি মিথ্যা, গাঁজাখুরি ও বানোয়াট। এমন কাহিনী বলা এবং শোনা হারাম। মসজিদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে জুমাবারের খুতবাপূর্ব বয়ানে একজন ইমামের মুখে এ ধরনের বক্তব্য দেয়া রীতিমতো পাপাচার এবং সরকারের জন্য একটি ভয়ঙ্কর খেলা। এমনিতেই ইসলামি দল এবং ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে মারাত্মক নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। এসব ইমামের জন্য সেসব নেতিবাচক ধারণা আরো বিস্তার লাভ করবে এবং সরকার বিপদে পড়বে। রাজনীতির কথা বাদ দিয়ে যদি কেবল ধর্মীয় বিষয় ধর্তব্যের মধ্যে আনি, তাহলে দেখা যাবে, কথিত ইমাম তার ভুল ব্যাখ্যা, মিথ্যাচার এবং বিকৃত তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে নিজের এবং মসজিদে উপস্থিত তামাম মুসল্লির দুনিয়া ও আখেরাতের তকদিরকে বিপদগ্রস্ত করে ফেলেছেন। যারা তার কথা শুনল এবং বিশ্বাস করল তারা গাফেল এবং গোমরা হয়ে পড়ল। অন্য দিকে, যারা তার বক্তব্যের বিরোধিতা না করে চুপ মেরে থাকল তারাও পাপের ভাগীদার হয়ে গেল। এবার আমি কিসসাটির অন্তর্নিহিত ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি।
হারুন অর রশিদ ছিলেন আব্বাসীয় খলিফা এবং একই বংশের পঞ্চম শাসক। তাকে কোনোভাবেই খলিফাতুল মুসলেমিন বলা যাবে না। খলিফাতুল মুসলেমিন শব্দটি কেবল খোলাফায়ে রাশেদিনের জন্য প্রযোজ্য। দামেস্ককেন্দ্রিক উমাইয়া বংশ, বাগদাদকেন্দ্রিক আব্বাসীয় বংশ, মিসরকেন্দ্রিক ফাতেমীয় বংশ ছাড়াও তুরস্কের অটোম্যানরা নিজেদের খলিফা বলে পরিচয় দিলেও মুসলিম উম্মাহ কোনো দিন তাদের খলিফাতুল মুসলেমিন বলে মেনে নেয়নি। বাদশাহ হারুন অর রশিদ ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে রয়েছেন তার উত্তম শাসনকার্য, সামরিক ও কূটনৈতিক সাফল্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা এবং সর্বোপরি আরব্য রজনীর গল্প সামগ্রীর জন্য। তার স্ত্রীর সংখ্যা ছিল পঁয়ত্রিশ জন। হেরেমের বাঁদীদের সংখ্যা আল্লাহই জানেন। অন্য দিকে, তার শাহজাদা ছিলেন পাঁচজন এবং শাহজাদী একজন। তাদের নাম ছিল মোহাম্মদ আল-আমিন, আবদুল্লাহ আল মামুন, মোহাম্মদ আল মুতাসিম, আল কাসিম, আবদান ও সুকাইনাহ। পুত্র-কন্যারা সবাই ছিলেন হারুন অর রশিদের বৈধ স্ত্রীদের সন্তান।
বাদশাহ হারুন অর রশিদের সাথে শিয়া-সুন্নি উভয় মতাদর্শের আলেম-ওলামাদের ভয়ানক মতবিরোধ এবং শত্রুতা ছিল। সুন্নি মতাদর্শের চারজন ইমাম যথা- ইমাম আবু হানিফা, ইমাম আহম্মদ ইবনে হাম্বল, ইমাম শাফী এবং ইমাম মালেক সবাই আব্বাসীয় খলিফাদের চাবুকের আঘাতে রক্তাক্ত হয়েছিলেন। কারাবরণসহ নানারকম ভয়ভীতি এবং জুলুম-অত্যাচারের শিকার হয়েছিলেন। শিয়াদের সপ্তম ইমাম মুসা বিন জাফর বাদশাহ হারুন অর রশিদ কর্তৃক খুন হয়েছিলেন। হারুনের সময়ই মুতাজিলা সম্প্রদায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এবং রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যে প্রচণ্ড প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। খলিফা মামুনের সময় মুতাজিলা মতবাদ রীতিমতো রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা লাভ করে। মুতাজিলা মতবাদ সম্পর্কে যারা জানেন না তাদের বলছি- এটা এমন এক মতবাদ, যার অনুসারীরা কুরআন-হাদিসের প্রত্যেকটি বিষয় দর্শনের জ্ঞান এবং যুক্তিতর্ক দ্বারা বাছ-বিচার করেন। তাদের দৃষ্টিতে যা যুক্তিযুক্ত এবং গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয় কেবল তাই তারা অনুসরণ করেন। অর্থাৎ মানুষের জ্ঞান দ্বারা খোদায়ি জ্ঞান এবং নবুওয়াতির শানকে চ্যালেঞ্জ জানান। ইসলামি পণ্ডিতদের মতে, মুতাজিলারা ইসলামের জন্য ইহুদি-নাসারাদের চেয়েও ভয়ঙ্কর ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টিকারী সম্প্রদায়। তাদের মদদদাতাকে যখন জাতীয় মসজিদের মিম্বর থেকে ওলি আল্লাহ বলে ঘোষণা করা হয়, তখন উপস্থিত মুমিন-মুত্তাকি এবং মুসল্লিদের কী করা উচিত তা হয়তো দেশের প্রাজ্ঞ আলেম সমাজই বলতে পারবেন।
ইমাম সাহেবের আরবি উচ্চারণেও যথেষ্ট ত্রুটি ছিল। হা, ইয়া, আইন, জিম, জাল প্রভৃতি বর্ণ-সম্বলিত শব্দমালা তিনি যথার্থভাবে উচ্চারণ করতে পারছিলেন না। তার তেলাওয়াতেও আরবি ব্যাকরণের আইন লঙ্ঘিত হচ্ছিল বারবার। ফলে এক দিকে যেমন তেলাওয়াত শ্রুতিমধুর হচ্ছিল না, তেমনি উচ্চারণে ভিন্নতার কারণে পুরো আয়াতের অর্থই বিকৃত হয়ে পড়ছিল। এমন একজন মানুষকে জাতীয় মসজিদের মতো স্পর্শকাতর স্থানে দলীয় পরিচয়ে কেন এবং কিভাবে নিয়োগ দেয়া হলো- এমনতরো প্রশ্নের উত্তরে কেউ কেউ বললেন- উনার বাড়ি নাকি গোপালগঞ্জে। আর উনি নাকি গোপালগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আবদুল্লাহর ভাগিনা। শেখ আবদুল্লাহ আওয়ামী লীগের অলিখিত ধর্মমন্ত্রী বলে বেশ পরিচিতি লাভ করেছেন। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব ডাইরেক্টরদের মধ্যে অত্যন্ত প্রভাবশালী একজন সদস্য। তার হুকুম বা সুপারিশ তামিল করবে না বা তার কোনো কাজের বিরোধিতা করবে, এমন বাপের ব্যাটা নাকি ধর্ম মন্ত্রণালয়ে একজনও নেই।
ইমাম সাহেবের নিয়োগ সম্পর্কে মুসল্লিদের তির্যক মন্তব্য আমাকে যারপরনাই ব্যথিত করল। আমার মনে হলো- মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে এবং বর্তমান সরকারের ভালোর জন্য বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারণী মহলের দৃষ্টির সামনে নিয়ে আসা আমার ঈমানি দায়িত্ব। আর এই দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের জন্যই বক্ষ্যমাণ নিবন্ধটি রচিত হয়েছে। আমার পুরো প্রচেষ্টা কেবল আল্লাহ এবং রাসূল সা:কে সন্তুষ্ট করার জন্য- কোনো ব্যক্তিগত লাভ-লোকসানের হিসাব যেমন এর মধ্যে নেই, তেমনি কোনো ব্যক্তি বা মহলকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ইচ্ছাও মনে জাগ্রত হয়নি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়েত দান করুন। আমিন।

No comments:

Post a Comment

Popular posts