Monday, February 29, 2016

আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে ধূম্রজাল !

  

 লাইফস্টাইল ডেস্ক : বাংলাদেশে চলমান বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনে আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ করছে মোবাইল অপারেটররা। বিবিসি বাংলার সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। যদিও এর আগে টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, মোবাইল অপারেটররা শুধু আঙ্গুলের ছাপ যাচাই করছে; তারা আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ করছে না।
   তবে বিবিসির অনুসন্ধানে বলা হচ্ছে, টেকনিক্যাল কারণে প্রথমদিন থেকেই আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ করা হচ্ছে। বাংলালিংকের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শিহাব আহমাদ স্বীকার করে বলেছেন, যে তথ্যগুলো আসে সব তথ্যই এখানে সংরক্ষণ করা হচ্ছে যতক্ষণ পর্যন্ত এটা ভেরিফাই করা না হচ্ছে। গত বছর ১৬ ডিসেম্বর থেকে আঙ্গুলের ছাপে সিম নিবন্ধনের কাজ শুরু হলেও সম্প্রতি এই নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিটিআরসি এক চিঠিতে অপারেটরদের আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ থেকে বিরত থাকতে বলেছে। 

২৫ ফেব্রুয়ারি বিবিসিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম যাচাই করতে মোবাইল কোম্পানির কাছে আঙ্গুলের ছাপ দেয়াকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করে এ পদ্ধতি নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এর বিরোধিতা করছেন অনেকে। গত ডিসেম্বর মাস থেকে আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে ১৩ কোটির বেশি সিম নিবন্ধন যাচাই শুরু হয়েছে। বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত দেড় কোটির বেশি মানুষ বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম যাচাই করে নিয়েছেন। এপ্রিলের মধ্যেই এভাবে আরও ১১ কোটির বেশি সিম নিবন্ধন করতে হবে।
    সাধারণ ব্যবহারকারীরা সরকারি এ নির্দেশনার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাবই দেখাচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে দেখা যাচ্ছে, আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে মোবাইল সিম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করেছে প্রথমে পাকিস্তান। বাংলাদেশে এটি শুরু হয়েছে এবং সর্বশেষ সৌদি আরবেও এ নিয়ম চালুর খবর পাওয়া গেছে। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং স্পর্শকাতর এসব তথ্যের নিরাপত্তার কারণে উন্নত রাষ্ট্র এবং সেখানকার নাগরিক অধিকার কর্মীরা সোচ্চার থাকেন। কিন্তু বাংলাদেশে নাগরিক অধিকারের স্পর্শকাতর এসব দিক অনেকটা উপেক্ষিত আছে বলে মনে করেন আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক। 
     
       ‘সংবিধানে যেটা বলা আছে আমার এই ব্যক্তিগত সবকিছুর গোপনীয়তা আছে। তবে সরকার দেশের স্বার্থে আইন করে এর ব্যতিক্রম করতে পারে। তো এখানে তো কোনো আইন নেই। আর আমরাও আমাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন না বলে আমরাও দিয়ে যাচ্ছি। তো আমি বলব যে চিন্তা করেন পরে হকার বা বাসে উঠতে বা দুধ কিনতে গেলে যদি ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে হয়, তখন কিন্তু আমরা ব্যাপারটা বুঝতে পারব যে এটা কত উদ্ভট কাজ হচ্ছে। বাংলাদেশে এখন থেকে নতুন সিম কেনা কিংবা সংযোগ বন্ধ করতেও আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে যাচাই করতে হবে। উদ্বেগ এবং বিতর্কের সূত্র ধরে জানতে চাই বায়োমেট্রিক তথ্য যাচাই প্রক্রিয়া কীভাবে হচ্ছে। 
     দেশটির অন্যতম একটি বড় অপারেটর বাংলালিংকের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শিহাব আহমাদ বলেন, ‘যে তথ্যগুলো আসে সব তথ্যই এখানে সংরক্ষণ করা হচ্ছে যতক্ষণ পর্যন্ত এটা ভেরিফাই করা না হচ্ছে। ভেরিফাই হওয়ার পরে বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী এগুলো হয় সংরক্ষণ করা হবে অথবা আমরা এটা পরে অন্য কোনো পদ্ধতিতে ডিলিট করে দেব।’ গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা দিয়ে থাকেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংরক্ষণ না করে ভেরিফাই করা সম্ভব না। ‘গ্রাহকদের সম্পূর্ণ তথ্য পরিপূর্ণভাবে সংরক্ষণ করা হয় এবং ওটা প্রটেকশন দেয়া হয়। এবং আমাদের সার্ভার থেকে এটা বাইরে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’ মানুষের আঙ্গুলের ছাপ, চোখের রেটিনা এবং ডিএনএ তথ্য একান্ত ব্যক্তিগত সম্পদ। প্রযুক্তিবিদ জাকারিয়া স্বপন বলেন, এ তথ্য রাষ্ট্র ছাড়া কারও কাছে থাকাই নিরাপদ নয়। ‘রাষ্ট্র শুধু এটা প্রটেক্ট করতে পারে বা স্টোর করতে পারে। 
       ওই ডেটাবেজ থেকে যদি কেউ পেয়ে যায় তাহলে তো ডেফিনেটলি ক্রাইম। এনশিওর করতে হবে যে গভর্নমেন্ট ছাড়া আর কেউ কোনো পাবলিক ইনফরমেশন স্টোর করছে না কোনো অপারেটর বা যারা এর মধ্যে কাজ করছে, ইভেন মিডলে যারা আছে। কারণ এই ফিঙ্গার প্রিন্টের প্রসেসটা কিন্তু থার্ড পার্টিরা ইমপ্লিমেন্ট করে দিয়েছে।’ স্বপন বলেন, আঙ্গুলের ছাপ তৃতীয় পক্ষের কাছে চলে গেলে নানা রকম অপব্যবহার হতে পারে। ‘রিস্কটা হল অন্য একটা পারসন আমাকে ইমপার্সনেট করতে পারে সে প্রিটেন্ড করতে পারে যে আমি জাকারিয়া স্বপন। 
        আমার অনুমতি ছাড়াই করতে পারে। বেসিক্যালি আমার যত যায়গায় ডিজিটাল ইনফরমেশন স্টোর করা আছে সব অ্যাকাউন্ট চাইলে সে নিয়ে নিতে পারে। এ রিস্ক কিন্তু শুধু আমার আপনার না সবার ক্ষেত্রে হতে পারে। ইভেন একজন কৃষকেরও হতে পারে। দেখা যাবে, উনি লোন নিয়ে বসে আছেন উনি জানেনই না।’ এদিকে বিটিআরসির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এমদাদ উল বারী বলেন, রিটেইলার লেভেলে সংরক্ষণ করার কোনো সুযোগই রাখা হয়নি। ‘টেকনিক্যালি ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংরক্ষণ করা সম্ভব না। কারণ এটা রিয়েল টাইম মিলিয়ে দেখা হয়। তবে অপারেটর লেভেলে এটা সম্ভব হতে পারে যদি আলাদা করে কেউ করে। 
        কিন্তু আমরা অপারেটরদের নির্দেশ দিয়েছি যেন এটা তারা না করে।’ এদিকে আঙ্গুলের ছাপ বিতর্ক নিয়ে ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন মোবাইল কোম্পানির কাছে আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণের কোনো প্রযুক্তিও নেই। এদিকে মোবাইল অপারেটরদের পক্ষ থেকে জানা গেছে কোনো পর্যায়ে বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষণ করা যাবে না বিটিআরসি এই নির্দেশনা দিয়েছে ২৩ ফেব্রুয়ারি।
(ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত)

No comments:

Post a Comment

Popular posts